পটুয়াখালী প্রতিনিধি : মনজুর মোর্শেদ তুহিন
কতৃপক্ষের ঢিলেঢালা তদারকিতে ধীরে ধীরে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পটুয়াখালী পৌরসভা। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত বর্তমানে ১ম শ্রেণীর নান্দনিক পটুয়াখালী পৌরসভায় ২৬ বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১লক্ষ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত পৌরসভার দাপ্তরিক সহ সকল উন্নয়ন কাজ চলছে মন্থর গতিতে। কিছু কিছু স্থানে চলমান নির্মাণ কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। যথাসময়ে আদায় হচ্ছে না বিভিন্ন শাখার রাজস্ব। বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে যাচ্ছে পৌরসভার জমি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকতেও পৌরসভার সরবরাহ সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয়ের বেশিরভাগ কাজ নিজেরাই করে থাকে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই অগাস্টে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একযোগে ৩২৩ মেয়রকে অপসারণের সঙ্গে পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ অপসারিত হয়। এরপর সরকার মনোনীত একজন পৌর প্রশাসক পটুয়াখালী পৌরসভার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং পৌর সচিব প্রশাসককে সহযোগীতা করতে সকল কাজের অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন।
সর্বশেষ সকল কাউন্সিলরদের অপসারিত করায় পৌরসভার বিভিন্ন শাখায় কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের সেবা নিয়ে থাকেন। তবে অধিকাংশ নাগরিকরা পৌরসভার সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। স্বৈরশাসক পতনের পর পৌরসভার জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পৌরসভায় দেয়া অভিযোগ সত্ত্বেও মাসের পর মাস পার হলেও অসংখ্য অভিযোগের কোন নিষ্পত্তি মিলছেনা। মাসের পর মাস ধরে নষ্ট হওয়া সড়ক বাকিগুলো সচল করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের নেই কোন মাথাব্যথা। শহরের বিভিন্ন স্থানের ড্রেনে ময়লা আবর্জনায় ভরে রয়েছে যা সামনের বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি করবে বিশাল জলাবদ্ধতা।
দের থেকে দুই বছর আগে শুরু হওয়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তা ও ড্রেনের কাজ চালু হলেও বর্তমানে সেসব কাজ বন্ধ রয়েছে, তবে কিছু কিছু কাজ খুব ধীর গতিতে চলছে যা লোক দেখানো। সদর রোড, নিউমার্কেট, পুরান বাজার, বাধঘাট, চৌরাস্তা সহ বেশ কয়েকটি বাজার এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান বসায় প্রতিদিন রাস্তায় লেগে থাকে যানজট। এতে প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্যক্তিগত কিংবা সরকারি নির্মাণ কাজে পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তা আটকে ইট বালু রড রাখায় হচ্ছে ভোগান্তি।
পতিত সরকারের সময় চালু হওয়া বিভিন্ন নির্মাণ কাজ ফেলে ঠিকাদাররা পালিয়ে গেলে সেগুলো পুনরায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে পৌরসভা থেকে কৌশলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে কাজ করাচ্ছে। যা পরবর্তীতে পৌরসভার অসাধু কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়া সহ কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। পতিত সরকারের আমলে উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার খালি জায়গাগুলোতে পুনরায় ব্যাঙের ছাতার মতো তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা যাতে কর্তৃপক্ষের সরাসরি মদত রয়েছে বলে
জানা যায়। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও লেনের কাজ সমাপ্তির পর কয়েকটি বর্ষা মৌসুম পার হাওয়ায় রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত ও গর্ত তৈরি হয় কিন্তু সেগুলো রিপেয়ারিং করার কোন উদ্যোগ নেই।
মধ্য আরামবাগের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম খান বলেন, মধ্য আরামবাগের ৩০০ ফুটের মতো একটি রাস্তায় ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণের নামে দুই বছর যাবত মাটি খুঁড়ে ফেলে রেখেছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। বর্ষাকালে এ রাস্তার দুই পাড়ের অন্তত ৫০ টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন কাটাই। তাছাড়া বহুদিন যাবত এখানে কোন সড়ক বাতি নেই। পৌরসভার কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।
শহরে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে দেখা যায়, নবনির্মিত পৌর কিচেন মার্কেট সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে রাস্তার ফুটপাত ও পার্কিং দখল করে রেখেছে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। বাধঘাট, চৌরাস্তা এবং কলাতলা বাজারেও একই অবস্থা। এসব স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট। ৯ নং ওয়ার্ড ছোট চৌরাস্তার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দুটি সড়কসহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশের গলিগুলোর অধিকাংশ স্থান, আরামবাগ, বাসস্টান্ড এলাকার কয়েকটি গলিতে পূর্বে সড়ক বাতি থাকলেও স্থানীয়দের অভিযোগ প্রায় ছয় মাস ধরে অধিকাংশ পোস্টের বাতি অকেজো।
এছাড়া, ১ নং ওয়ার্ডের ২ নং বাধ ঘাটের দক্ষিণ দিকের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা, পুরাতন ফেরিঘাট সড়ক সহ বেশ কয়েকটি সড়কে বাতি না থাকায় এলাকাবাসী বিপদে। সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের নামে শহরের আরামবাগ, সদর রোড, চৌরাস্তা সহ বেশ কয়েকটি স্থানের কাজ চলছে মন্থর গতিতে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক এর ক্লিনিকাল বজ্য পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীর মাধ্যমে সংগ্রহ করে কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় ধ্বংস না করে পৌরসভা নির্ধারিত ময়লা ফেলার স্থানে ফেলা হয়।
চৌরাস্তার স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ছোট চৌরাস্তা থেকে মুন্সিবাড়ি হয়ে তালুকদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা। আজ ছয় মাস পর্যন্ত কোন বাতি জ্বলে না। ট্রেনের কাজ অর্ধেক করে ফেলে রেখেছে। আর হবে কিনা তাও জানিনা। মুন্সিবাড়ির দরজা মেয়রের করে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু সরকার পল্টি দেওয়ায় কাজ ধরতে পারে নাই। এবছর মাত্র দুই দিনের বৃষ্টিতে রাস্তার উপরে পানি জমছে সরকারের কাছে এলাকাবাসীর পক্ষে এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাই।
পৌর সচিব মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, আগের সরকার চলে যাওয়ার পর কিছু বন্ধ কাজ চালু করা হয়েছে। এগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন দেখাশোনা করে। আগের ঠিকাদার ঠিকই আছে তবে তার অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে অন্য কেউ কাজ করে। নির্ধারিত সরবরাহকারী আছেন তার মাধ্যমেই ক্রয় বিক্রয় সরবরাহ করি তবে ইচ্ছে করলে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরুরি মালামাল কেনাকাটা করা যায়। বাজেট স্বল্পতার কারণে মাঝে মাঝে আমরা কিছু সড়ক বাতি কিনি তবে ঝড় বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। ক্লিনিক হাসপাতালের সাথে বজ্য সংগ্রহের চুক্তি আছে, ইনসুলেটরে বর্জ্য পোড়ানোর নিয়ম কিন্তু আমাদের ইনসুলেটর নেই এজন্য আমরা পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনের ডাম্পিং করি।
আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ফুটপাত থেকে লোকজন সরাই দেই, পরে এসে আবার তারা দখল করে।
পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ জুয়েল রানা বলেন, খুব শীঘ্রই অস্থায়ী দোকানগুলো সরিয়ে দেয়ার জন্য উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। একই সঙ্গে শহরের প্রতিটি এলাকার অবৈধ ফুটপাত ও রাস্তা দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে। আমি পৌরসভার দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকগুলো নতুন লাইট লাগিয়েছি, বিভিন্ন সময় যেখানে লাইট নষ্ট হওয়ার খবর পাই সাথে সাথে আমরা কাজ করি। জলাবদ্ধতা নিরসনে খুব দ্রুতই ড্রেনের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতেছি এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী দ্বারা নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারর কাজ চলমান আছে। অনুমোদিত টেন্ডার প্রসেস করা কাজগুলো চলমান আছে তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজগুলোর কিছু কাজ চালু হয়েছে। বিধি বহির্ভূত যদি কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা নেয়া হবে।